পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ স্বরূপকাঠির পোষ্ট ই সার্ভিসের বেহাল অবস্থা। উপজেলার ৫ টি চালু থাকলেও ১৫ টি সেন্টারের মালামালের স্থান হয়েছে কারো বাড়ীতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অস্তিত্বহীন ওইসব সেন্টারে সরকারের দেওয়া লাখ লাখ টাকার ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ মূল্যবান সামগ্রি উবছরের পর বছর ফেলে রাখায় অকেজো হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকতে থাকতে অনেক গুলো ল্যাপটপ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবী উদ্যোক্তা ও পোষ্ট মাষ্টারের। কার্যক্রম না থাকলেও প্রতিমাসে প্রতিটি কেন্দ্রের বিপরীতে সরকারের খাতে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে সরকারের তহবীলে জমা করছেন উদ্যোক্তারা। ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা সারানোর জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেননি বলে জানান উদ্যোক্তা ও পোষ্ট মাষ্টারগন।
জানাগেছে, স্বরূপকাঠি উপজেলায় তিনটি সাব পোষ্ট অফিসের আওতায় ২০ টি পোষ্ট ই সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের প্রধান ডাকঘরের অধিনে মোট ৬ টি, জলাবাড়ী সাব পোষ্ট অফিনের অধিনে ৬ টি, কৌড়িখাড়া সাব পোষ্ট অফিসের অধিনে ৫ টি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট সাব পোষ্ট অফিসের আধিনে ৩ টি মোট ২০ টি পোষ্ট ই সেন্টার রয়েছে।
উপজেলার প্রধান ডাকঘরে দুইজন উদ্যোক্তার মধ্যে একজন উদ্যোক্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছে। ওই খানে সরকারের দেওয়া ডেক্সটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ ছাড়াও তিনি নিজে আরো ১০ টি ল্যাপটপ কিনে সেন্টার চালাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রে বর্তমানে প্রশিক্ষনার্থী রয়েছে ৫০ জন। ওই কেন্দ্রে গ্রাহকদের নানা প্রকার সেবা প্রদান করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন। ওই পোস্ট অফিসের আওতাধীন মাহামুদকাঠি, কুড়িয়ানা, ধলহার, সংগীতকাঠি, শান্তিরহাট বন্ধ রয়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ আদৌ জানেনা এমন একটি প্রকল্প আছে।
জলাবাড়ী সাবপোষ্ট অফিসে উদ্যোক্তা অসিত মিস্ত্রী কেন্দ্র টি চালু রয়েছে। ওইখানের অপর উদ্যোক্তা কোন কাজ করেন না। কামারকাঠি, করফা, মাদ্রা, সমুদয়কাঠি, পূর্ব জলাবাড়ী কোথাও পোষ্ট ই সেন্টারের গুলোর কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সমুদয়কাঠি পোষ্ট অফিসের আওতায় পোস্ট মাষ্টার আশুতোষ শীলের মেয়ে সীমারানী উদ্যোক্তা তার কেন্দ্রের ৩ টি ল্যাটপটপের আশ্রয় হয়ে বাড়ীর বাক্স ও আলীমরার মধ্যে। সীমা শীল স্বীকার করেছেন তিনি এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী সৃষ্টি করতে পারেননি। পূর্ব জলাবাড়ীতে অস্তিত্ব খুজে পাওয়াযায়নি। মাদ্রার পোষ্ট মাষ্টার তার বাড়ীতে আলমিরা বাক্স ও তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন। উদ্যোক্তা তার ছোট ছেলে ও মেয়ে। ওই ছেলে ঢাকাতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করেন। তার বড় ছেলে একটি কলেজে আইসিটির টিচার সে একটি ল্যাপটপ নিজে ব্যবহার করেন। শান্তিরহাট কেন্দ্রের মালামাল পোষ্ট মাষ্টার কোয়াক ডাক্তার কুদ্দস মিয়ার কাছে আছে বলে পোষ্ট ম্যান জানান। কামারকাঠির ও করফা কেন্দ্রের একই অবস্থা।
কৌড়িখাড়া সাব পোষ্ট অফিসের অধিনে পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে কৌড়িখাড়া কেন্দ্রটি উদ্যোক্তা মিরাজের খান এন্টারপ্রাইজ নামে মিয়ারহাট বাজারে ও আলকিরহাটের সেন্টারটির উদ্যোক্তা তানিয়া একতা বাজারে চালু রেখেছেন। রাজাবাড়ী পোষ্ট অফিসের অধিন কেন্দ্রটি পোষ্ট মাষ্টার গ্রাম ডা.ছিদ্দিকুর রহমান চৌধূরীর মেয়ে সানজিদা ও জামাতা আশিক চৌধূরী উদ্যোক্তা। মেয়ের নিয়োগপত্রে সমস্যা রয়েছে বলে ছিদ্দিকুর রহমান জানান। পোস্টসেন্টার ও মালামাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেন্টার বিন্না বাজারে মালামাল উদ্যোক্তা আশিক চৌধুরীর হেফাজতে আছে। বিন্না বাজারে গিয়ে দেখো যায় একটি ঘরের দোতালায় সাইনবোর্ড লাগানো আছে। কিন্তু এই ঘরে কোন সেন্টার নেই। সেখানে অটরিকশা চালক সমিতির কার্যালায় বিদ্যামান। আশিক চৌধুরীর বাড়ী গিয়ে জানাযায় তিনি বাড়ীতে নেই। এসময় পোস্ট মাষ্টার সিদ্দিকুর রহমান জানান আশিক চৌধুরী পিরোজপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন এলজি বাটার ফ্লাই শোরুমে চাকরি করেন তিনি সেখানে থাকেন। আশিকের বাবা দেখান মালামালগুলো ওই বাড়ীর আলমিরাতে কাপড়-চোপড়ে মধ্যে রাখা রয়েছে। এছাড়া মুনিনাগ, চিলতলা কেন্দ্রের অবস্থাও একই রকম। এছাড়া ঝালকাঠি সদর পোষ্ট অফিসের সাব পোষ্ট াফিস শেখের হাটের আওতায় সেহাংগল, মৈশানী ও দুর্গাকাঠিতে তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। মৈশানী কেন্দ্রের মালামাল পোষ্ট মাষ্টার মৈশানী বালিকা বিদ্যালয়ের কেরানী জলিলের বাড়ীতে ছিল। বছর খানেক পূরের্ব সাংবাদিকদের ধাওয়ার কারনে সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদে (জুলুহার) সেন্টার খুলেছে। সেখানে রয়েছে সেহাংগল কেন্দ্রের মালামাল। সেহাংগলের উদ্যোক্তা ঢাকায় চাকরী করেন। দূর্গাকাঠির কোন অস্তিত্ব নেই। উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের বিপরিতে প্রতিমাসে উদ্যোক্তারা ৫০ থেকে দুই শত করে টাকা জমা করেদেন।
বেশিরভাগ কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও পোষ্ট মাষ্টারদের অভিযোগ বরিশালের ডিপিএমজিকে মালামাল নষ্ট হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে বরিশালের ডিপিএমজি মো. মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে সবগুলো কেন্দ্র প্রথম থেকেই চালু রয়েছে বলে দাবী করেন। এক প্রশ্নে জবাবে বলেন, কেন্দ্রে সমস্যা আছে। পরে এক এক করে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, সরকার ভাল মালামাল দিয়েছে। উদ্যোক্তা নিয়োগ দিয়েছেন। তারা মালামালগুলোর রক্ষনা বেক্ষন, মেরামত করে সার্বক্ষনিক চালু রেখে আয় করবে তার একটি সামান্য অংশ সরকারী কোষাগারে জমা দিবে। মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে অজুহাত দেখিয়ে বসে রয়েছে। মালামাল উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে সারিয়ে নিবেন। অভিযোগ যখন পেয়েছি তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply